আ,হ জুবেদঃ আন্তর্জাতিক পানি দিবসে বলা হয়েছে এখন পর্যন্ত বিশ্বের দশটি দেশে বিশুদ্ধ পানির চরম অভাব পরিলক্ষিত করা গেছে। আর সেসব দেশ হচ্ছে যথা ক্রমে আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, ছাদ, কম্বোডিয়া , লাওস, হাইতি, ঘানা, ভারত, রুয়ান্ডা ও বাংলাদেশ।
ইউএন নামে আন্তর্জাতিক এক সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে বিশ্বে এখনো প্রায় ৭৮৩ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং প্রতি বছর ৬ থেকে ৮ মিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান না করার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তাছাড়া ২.৫ বিলিয়ন জনগোষ্টি এখনো পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধে থেকে বঞ্চিত।
এমতাবস্থায় একথা বলার অবকাশ নেই যে, বিশ্বের বর্তমান উপরোক্ত পরিস্থিতি ও পরিবেশের বিষয় গুলো নিশ্চয় আমাদেরকে চরম ভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।অথচ এই প্রেক্ষাপটে যদি আমরা আরব বিশ্বের তেল সম্পদে সমৃদ্ধশালী দেশ কুয়েতের দিকে তাকাই; তাহলে বিশুদ্ধ পানি সমস্যা কিংবা পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধে এই বিষয় গুলো সম্পূর্ণ অপরিচিত এখানকার জনগোষ্টির জন্য।
কুয়েতে বিশুদ্ধ পানি বিনামূল্যে বিতরণ, এটি কোনো নতুন বিষয় নয় এখানে।
কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশীরা নিশ্চয় লক্ষ্য করে থাকবেন, বিশেষ করে গরম মৌসুমে যখন এখানকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে গিয়ে পৌঁছে; তখন কুয়েতের অভ্যন্তরে প্রায় জাগায় দেখাগেছে স্থানীয় কুয়েতিরা নিজ গাড়ীতে করে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে কুয়েতের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সেটি রাস্তায় চলাচলরত মানুষদের মধ্যে বিতরণ করে থাকেন। আর মাহে রমজানের পুরো মাস জুড়েই শুধু বিশুদ্ধ পানি’ই না রীতিমতো পেটভরে খাবার (ইফতার) এর সুযোগ প্রতিটি মসজিদে তো রয়েছেই।
তবে কুয়েতে এবার একটি ব্যতিক্রমধর্মী মানব সেবা দেখে তাও সেটি ব্যক্তি উদ্যোগে হওয়াতে আমাকে শুধু আনন্দিত’ই নয়; পাশাপাশি কুয়েতী নাগরিকদের প্রতি আমার কয়েক গুণ শ্রদ্ধাবোধ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
আজ যখন আমার দুই প্রবাসী বন্ধু ফয়জুল হক কুটি ও শেখ আব্দুল আহাদকে নিয়ে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বৈশাখী অনুষ্টানে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম; ঠিক তখন কুয়েতের জাব্রিয়া এলাকা অতিক্রম করে যাওয়ার সময় ঐ এলাকার এক কুয়েতি নাগরিকের বাসার দিকে চোঁখ পড়লে দৃষ্টিগোচর হয় বাসার সামনে একটি ফ্রিজ সযত্নে রাখা হয়েছে।একসময় আরেকটু কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম ফ্রিজটির ভেতর খুব সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও অনেক গুলো (কবুজ) ব্রেডের প্যাকেট।
এবার গাড়ী থেকে নেমে ফ্রিজের কাছে গিয়ে এখানে ফ্রিজ রাখার কারণ অনুসন্ধানে বেশি সময় ব্যয় করতে হয়নি।
কারণ ফ্রিজের গায়ে আরবিতে লেখাছিল, এটি এক ধরনের সদকা সরূপ বিনামূল্যে পানি পান করতে এখানে রাখা হয়েছে।বিশ্বের অন্যান্য বিশুদ্ধ পানির সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের কথা না হয় নাই বললাম; কিন্তু বাংলাদেশের এক বৃহৎ জনগুষ্টি বিশুদ্ধ পানির সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কথা তো শুধু আমি’ই না সবাইকে বলতে হবে। এবং কীভাবে গ্রাম-শহর সর্বত্রে সাধারণ মানুষদেরকে বিশুদ্ধ পানি সুবিধা নিশ্চিত করা যায়; এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে সংশ্লিষ্ট মহলকে, তবেই আমাদের বাংলাদেশে সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখী মানুষদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়বে এবং দেশ-জাতি উন্নত থেকে উন্নতর হবে।
আজ কুয়েতের রাস্তায় চলতে গেলে বিনা পয়সায় বিশুদ্ধ পানি পান করার সুযোগ নিশ্চয় বিশ্বের বুকে মানব সেবামূলক একটি অনন্য ভূমিকা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবে।